ফ্ল্যাশব্যাক... অনেকগুলো দৃশ্য পরপর চলে গেল... প্রথম দেখা... প্রথম কথা হওয়া... প্রথম হাতে হাত রাখা... চলে যেতে যেতে আবার ফিরে তাকানো... মায়াময় সেই দৃষ্টিটা... প্রথমবার সেই তিনটি শব্দের ম্যাজিকাল বাক্যটা বলা... চোখে চোখ রেখে হারিয়ে যাওয়া... একসাথে কাটানো মুহূর্তগুলোতে ফারিহা কখনো হাত ছাড়তে চাইতো না... বাচ্চাদের মতো সারাক্ষণ হাত ধরে থাকতো। পার্থিব মাঝে মাঝে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করতো, - " সমস্যাটা কি তোমার ? এভাবে বাচ্চাদের মতো সারাক্ষণ হাত ধরে থেকে কি মজা পাও বলো তো ? " ফারিহা পার্থিবের দু'হাতের আজলাতে মুখ ডুবিয়ে বলত, - " সেটা যদি বুঝতে ! " - " তো বুঝিয়ে বলুন ! " ফারিহা বুঝতে পারে পার্থিব রেগে যাচ্ছে। রেগে গেলে পার্থিব আপনি করে বলে। " এখানেই থামাতে হবে "... মনে মনে ভাবলো ফারিহা। পার্থিবের রাগ সাংঘাতিক। একবার রেগে গেলে কন্ট্রোল করা মুশকিল। দু'হাতে পার্থিবের মুখটা ধরে নিজের দিকে ফেরালো ফারিহা... তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ... অপলক... - " তোমাকে হারানোর ভয়টা সারাক্ষণ আমার মধ্যে কাজ করে। তুমি বোঝো না ? " মৃদু হাসে পার্থিব। এলো চুলগুলো সরিয়ে দেয় আলতো ছোঁয়ায়, - " এতো ভয় কিসের তোমার ? এই তো আমি আছি। একদম তোমার কাছে ! একি কাঁদছো কেন ? " - " তুমি আমায় ভালোবাসো তো, পার্থিব ? পার্থিব কোন জবাব দিলো না। গভীর আবেগে জড়িয়ে ধরলো ফারিহাকে। নাহ ! আর ভাবতে পারছে না, পার্থিব ! কেন এই আচ্ছন্নতা ? সে তো ফারিহাকে ভুলেই গিয়েছিলো। মন থেকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলেছিল ওর সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত ! তাহলে এই পরম আকাঙ্খিত দিনে কেন মনে পড়ছে সেই বিশ্বাসঘাতকের কথা ? কেন ভিজে উঠছে চোখ ? চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেই দিনটা। হাত ছাড়িয়ে নিলেই বাচ্চাদের মতো কান্না জুড়ে দিত যে মেয়েটা। সেদিন কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই দাঁড়িয়েছিলো ফারিহা। পার্থিবই শুরু করলো, - " এতো জরুরি তলব ? " - " একটা কথা বলতে এসেছি। বলেই চলে যাবো ! " - " বল " - " আমি রিলেশনটা রাখতে চাচ্ছি না ! " নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না পার্থিব... - " মানে ? " - " মানে এখনো বোঝনি ? আমি তোমার সাথে রিলেশনটা কন্টিনিউ করতে চাচ্ছি না ! " - " কিন্তু কেন ? - " বি প্র্যাক্টিক্যাল, পার্থিব ! তুমি কোথাও চান্স পাওনি ! তোমার ফিউচার এখন অনেকটাই আনসার্টেন ! আর ন্যাশনালে পড়া কোন ছেলের সাথে রিলেশন বাসা থেকে একসেপ্ট করবে না ! এমন অবস্থায় তোমার সাথে নিজেকে আরও বেশী করে জড়িয়ে আমি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারতে পারবো না ! সো বেটার ! আমরা আলাদা হয়ে যাই ! তোমার জন্যও ভালো ! আমার জন্যও ভালো ! " একটু দম নিলো ফারিহা। আবার শুরু করলো, - " তাছাড়া আমাকে এখন ঢাকায় থাকতে হবে নিয়মিত। তুমি থাকবে এখানে। আদৌ ঢাকায় মুভ করতে পারবে কিনা সেটার ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে ! দূরত্বটা এমনিতেই ক্রিয়েট হয়েই যেত আস্তে আস্তে ! একসময় আলাদা হয়েই যেতে হতো আমাদের ! তার চেয়ে মিউচুয়ালি শেষ করে ফেলাটাই ভালো ! " পার্থিব নির্বাক ! চুপচাপ শুনে যাচ্ছিলো শুধু। কিছুই বলার ছিল না তার। ফারিহা ' গ-ইউনিটে ' ৫০তম হয়েছে। ফিন্যান্সে চান্স পেয়েছে। সামনে ব্রাইট ফিউচার। অনেক স্বপ্ন। অন্যদিকে কোন পাবলিক ভার্সিটিতেই চান্স পায়নি সে। সবই জানতো সে। কিন্তু এমন কিছু একটা হবে সেটা কল্পনাতেও আসেনি তার। এমনকি তার কোথাও চান্স হয়নি জানার পর ঠাণ্ডাস্বরে " আচ্ছা, রাখি এখন ! " শোনার পরেও না। ! অথচ আজ কি শুনলো সে এসব ? - " আমি আসি। ভালো থেকো। " ভাবনার জগত থেকে বাস্তবে ফিরে এলো পার্থিব। একান্ত আপন সেই অবয়বটা আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে চোখের আড়ালে। ডাকতে গেল পার্থিব। কিন্তু না ! তার গলা চেপে ধরলো কেউ ! কাকে ডাকবে সে ? সাফল্য যাকে মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত অতীত ভুলিয়ে দিলো ? যার কাছে ভালোবাসার চেয়ে সাফল্য বড় ? ভালবাসাকে যে পরিমাপ করে অর্জনের দাঁড়িপাল্লায় ? অজান্তেই বসে পড়লো মাটিতে। নিজের ব্যর্থতা... অসহায়ত্ব... অশ্রু হয়ে ঝরে পড়লো অঝোরধারায় ! ফ্ল্যাশব্যাক চলছে... সেদিনের পর থেকে ১টা মাস প্রায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা... মার সার্বক্ষণিক টেক-কেয়ারে একটু একটু করে স্বাভাবিক হওয়া... মাকে সবকিছুই খুলে বলেছিল পার্থিব। সেই ক্রিটিক্যাল সময়টাতে অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন মা। সাহস জুগিয়েছিলেন পরের বার আরও ভালো করে প্রিপারেশন নেয়ার। রাতে পাশে জেগে থাকতেন মা। উৎসাহ দিতেন সারাক্ষণ। কোচিংয়ের স্যারেরাও অনেক হেল্প করেছিলেন। আস্তে আস্তে তার মধ্যে একটা চোয়ালদৃঢ় প্রতিজ্ঞার জন্ম হয় ! সে প্রতিশোধ নিবে ! কঠিন প্রতিশোধ ! নিজের সাকসেস নিয়ে খুব গর্ব ছিল ফারিহার। সাকসেস কি সেটা এবার দেখিয়ে দিবে সে। পার্থিবকে সে চেনে না ! ! ***-----**-----**-----**-----**-----**-----**-----*** MENTOR'S কলাবাগান ব্রাঞ্চ... বসে আছে পার্থিব। ভাইভার রেজাল্ট দিয়েছে আইবিএ তে। অল্পের জন্য টপ টেন মিস করেছে সে। মেরিট পজিশন ১১ ! উচ্ছ্বসিত প্রশংসা সবার... ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে সে। আসরের মধ্যমণি সে। ফটোসেশন চলছে। হঠাৎ বেজে উঠলো মোবাইলটা। একটু আড়ালে চলে গেল রিসিভ করতে। চোখের সামনে মোবাইলটা ধরতেই জমে গেল যেন পার্থিব, " She Calling " এই মুহূর্তটার জন্যই শত কষ্টের পরও নাম্বারটা ডিলিট করেনি সে। রেখে দিয়েছিলো। কিছুক্ষণ স্ক্রীনটা চোখের সামনে নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো সে। স্থির চোখে তাকিয়ে আছে। একটা ক্রূর হাসিতে ধীরে ধীরে বেঁকে গেল ঠোঁটের একপাশ ! " আমি জানতাম তুমি ফোন করবে ! " - ফিসফিসিয়ে বলল পার্থিব ! কেটে দিলো কলটা। তারপর সিমটা খুলে ফেলল। " বিশ্বাসঘাতক ! ! " - দাঁতে দাত ঘষল সে ! বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নিলো পার্থিব। সে এখন অনেক প্র্যাক্টিক্যাল। ! ! আস্তে করে পা বাড়ালো হলরুমের দিকে। পাশার আজকের দানটা তার ! !
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
পবিত্র বিশ্বাস
ভাল লাগলো... শুভ কামনা রইল। আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।